নিমগাছ – বনফুল (ছোটগল্প)

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে।
পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ।
কেউ বা ভাজছে গরম তেলে।
খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে।
চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ।
কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে।
এমনি কাঁচাই…..

কিংবা ভেজে বেগুন- সহযোগে।
যকৃতের পক্ষে ভারী উপকার।
কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক…। দাঁত ভালো থাকে।
কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুসী হন।
বলেন-“নিমের হওয়া ভাল, থাক, কেটো না।”
কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না।
আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।
শান দিয়ে বাধিয়েও দেয় কেউ- সে আর এক আবর্জনা।
হঠাৎ একদিন একটা নূতন ধরণের লোক এল।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে বেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙ্গলে না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।
বলে উঠলো, “বাঃ কি সুন্দর পাতাগুলো…..কি রূপ। থোকা থোকা ফুলেরই বা কি বাহার….এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাঃ–”
খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।`
কবিরাজ নয়, কবি।
নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না।মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।
ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্ণী বউটার ঠিক এই দশা।

(বনফুল-বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়)

বন্ধু সিরিজ-১

আমি এবং আমার বন্ধু জয়……
জয় আর আমি ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন, ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে এক সাথে বসেছি। যদিও আমি আর ও একই শহরে বেড়ে উঠেছি
( পরে জানলাম পাশাপাশি মহল্লায় আমাদের বাসা, এবং আমরা কিছুদিন একই স্কুলেও একই সাথে পড়েছি), তবুও জয়ের সাথে পূর্বে আমার কোনদিন পরিচয়  হয়েছে বলে মনে হয়নি। প্রথম ও প্রধান কারণ আমার ঘরকুনো স্বভাব, এবং দ্বিতীয় কারণ, আমি খুব দ্রুত আমার স্বল্প পরিচিত মানুষদের ভুলে যাই।

জয় আমার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর মানুষ। সে বন্ধু-বান্ধব এবং আশপাশের মানুষজন নিয়ে হই-হুল্লোড় করছে। রাত করে ঘরে ফিরছে। আর আমি আমার গুটিকয় বন্ধুদের হারিয়ে একাকি বন্ধু খুজে ফিরছি। এই সময়-ই জয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব। হয়তো বিপরীত মেরুর বলেই জয়ের সাথে আমার বন্ধুত্বটা খুব দ্রুতই হয়ে গেল। সাথে আরো ৩ জন বন্ধু-বান্ধবী। সারাদিন আমরা ৫ জন এক সাথে ঘুরছি ফিরছি। যেখানেই যাই ৫জন এক সাথে যাচ্ছি। ক্লাসের ফাকে ফাকে সারা ক্যাম্পাস টইটই করে ঘুরছি। ছিলাম ক্যান্টনমেন্ট কলেজে তাই স্বাধীনতা জিনিসটার স্বাদ পেলাম এই ভার্সিটিতে এসে।

কিছুদিন পরে আমাদের একটা সার্কেল হয়ে গেল। আমরা নিয়মিত একটা ডোবা আকৃতির একটা পুকুরের বাধানো ঘাটে আড্ডা দেই( পুকুর-পাড় )। আমাদের আড্ডার কেন্দ্র বিন্দু জয়। আমরা যেই গল্পই শুরু করি তা জয় পর্যন্ত যাবেই। আর আমাদের প্রধান কাজ জয়ের দোষ খুজে বের করায়।
জয় কি করেছে একটা প্যান্ট কিনেছে। ওই প্যান্টের দোষ খুজে বের করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রথম দোষ এই প্যান্টের সামনের পকেটগুলা কি বিদখুটে। আর কি দোষ!!!! দোষ আরোও আছে, এই প্যান্ট ত প্যান্ট প্রজাতিতেই পরে না। এইটা ত ট্রাউজার।
আচ্ছা আজকে জয় পুকুর-পাড়ে আসে নাই। কি কারণ!! কারণ ত সহজ, জয় কালকে আমাদের ১ লিটার স্প্রাইট খাওয়াইছিল ওই টাকা উসুল করতে, রিক্সা ভাড়া বাচাতে জয় আজকে আসে নাই(  জয়ের কৃপণতা সর্বজনবিদিত-যদিও জয় মোটেই তা নয়)।
হিসাব কর জয় কয়দিন আসবো না। ২০টাকা লাগে জয়ের আসা -যাওয়া করতে তাইলে তিনদিন। ৩*২০= ৬০ টাকা। এক লিটার স্প্রাইট=৪৫টাকা। ১৫টাকা লাভ।
পরদিন জয় এসে হাজির। কিরে জয় তুই আজকে কি ব্যাপার?? ঘটনা বুঝস নাই? জয় তো তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসছে( জয়ের গার্লফ্রেন্ডের বাসা পুকুরপাড়ের কাছে )।
জয় ছাড়া যে আমরা ভার্সিটি লাইফ কেমনে পার করতাম তাই ভাবি!!